কেমন ছিলো “কাছে আসার অফলাইন গল্প” গুলো !
গত কয়েক বছর ধরে ভ্যালেন্টাইনের বেশির ভাগ ফিকশনই ভালো লাগছে না। এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। অনেকগুলো কাজই ভালো লেগেছে। ভ্যালেন্টাইনের অনেক কাজের ভিড়ে দর্শকের বাড়তি আগ্রহ থাকে ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পের জন্য। এই পোস্ট সেই গল্পগুলো ঘিরেই। কম ভালো লাগা থেকে ক্রমানুসারে শুরু করি;
(৩) তোমার পিছু পিছু
শুরুতেই গল্পটা খুব ইন্টারেস্টিং মনে হলো। রেস্টুরেন্ট বিজনেস – ফুড কার্ড নিয়ে দেশীয় কোনো ফিকশন সম্ভবত আগে দেখিনি। কিন্তু ভালো লাগা বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি। মীম আর তাহসানের একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজে পারফরমেন্স করায় মনোযোগ দিতে কষ্ট হচ্ছিলো। মীম এতটা বাজে অভিনয় সম্ভবত এর আগে কখনো করেনি, উচ্চারন আর এক্সপ্রেশনে এত সমস্যা! আর তাহসানের ক্যারেক্টারটা উনার জনরা থেকে একটু ডিফরেন্ট ছিলো। কিন্তু সেটা উনার জন্য সমস্যা হবার কথা না, উনার জনরা থেকে ডিফরেন্ট জনরায়ও যে উনি ভালো পারফর্ম করতে পারে সেটা এই ভ্যালেন্টাইনেরই শর্টফিল্ম “বরষা” তে দেখা গেছে। ডিরেক্টর অনিমেষ আইচ অনেক যত্ন করে তাহসানের কাছ থেকে অভিনয়টা আদায় করেছে সেটাতে। তাহসান আঞ্চলিক ভাষায় যে এত চমৎকার কথা বলতে পারে বিশ্বাসই হচ্ছিলো না। সাথে এই ভ্যালেন্টাইনেই তাহসান অভিনীত মিজানুর রহমান আরিয়ানের “আমার গল্পে তুমি” আর আশফাক নিপুনের “শুনতে কি পাও” দুইটি ফিকশনেও ভালো পারফর্ম করেছেন। কিন্তু ফাইনালি ‘তোমার পিছু পিছু” দেখে হতাশ। একটু ডিফরেন্ট ক্যারেক্টারে ভালো করতে গিয়ে ওভার অ্যাক্টিং করে উড়িয়ে দিয়েছেন সব কিছু। এক্ষেত্রে তাহসান থেকে আমি ডিরেক্টর মাবরুর রশিদ বান্নাহকে বেশি দায়ী করবো। এমনিতেও তাহসান খুব ভালো অভিনয় না করলেও অনেক ডিরেক্টর অভিনয়টা উনার কাছ থেকে আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করেছেন, সেক্ষেত্রে এই পরিচালক পুরোপুর ব্যর্থ। অভিনয়ের পাশাপাশি এই নাটকের চিত্রনাট্যও খুব খারাপ ছিলো। প্লট টা শুরুতে ইন্টারেন্টিং মনে হলেও ৫-১০ মিনিট পরে চিত্রনাট্যের কারণে সেটা গতানুগতিক হওয়া শুরু করে। মায়ের ক্যান্সারের ব্যাখ্যা দিয়ে পাস্তা কিনতে আসা, বা একজন অপরিচিত মেয়েকে দেখে হঠাত তাকে এলাকার একজনের এতিম অবস্থার গল্প শুনানো সহ অনেক ব্যাপারই খুব লেইম লাগছিলো। কিন্তু অনেক কিছুই চোখ এড়িয়ে যাচ্ছিলো ডিরেক্টরের বুদ্ধিমত্তার কারণে। এই ফিকশনের সেট ডিজাইন, কালার গ্রেডিং, লাইটিং এতই অসাধারণ ছিলো যে খুব সহজেই নেগেটিভ দিকগুলো চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। সাথে ছিলো মীমের সৌন্দর্য্য। পুরো ফিকশনে সৌন্দর্য্যের কোনো কমতি ছিলো না। দেখে চোখের আরাম। এই সৌন্দর্য্যের দিক থেকে এটা অবশ্যই কাছে আসার গল্পের বাকি দুইটা গল্প থেকে এগিয়ে। কিন্তু স্ক্রীনপ্লে আর অ্যাক্টিং-এ মার খেয়ে গেছে।
রেটিং: ৬.৫/১০
ইউটিউব লিংকঃ https://youtu.be/XHMb_l_P7Bs
.
(২) মেঘ এনেছি ভেজা
ডিরেক্টর রুবায়েত মাহমুদের ফিকশনের সাথে তেমন পরিচয় না থাকায় কোনো রকম এক্সপেক্টেশন ছাড়াই এটা দেখা শুরু করেছিলাম। এতেই লাভ হলো। দেখা শেষে বেশ ভালো লাগলো এই ফিকশনটা। গল্পটা বেশ সাদামাটা। সাদামাটা ভাবেই চলছিলো কিন্তু ফেসবুক বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে গল্পে এক্সাইটমেন্ট বেড়ে গেলো। এই ফিকশনের ভালো দিকগুলো বললে সবার প্রথমেই বলতে হবে এটার চিত্রনাট্যের কথা। এমন সাদামাটা প্লটকেও এত বেশি প্রানবন্ত করার পেছনে চিত্রনাট্যের অনেক বড় অবদান। লোকেশন অনেক সুন্দর ছিলো। মূল চরিত্রে সিয়াম বেশ ভালো করেছে, সাথে সাবিলাও। আর টুরিস্ট গাইড চরিত্রে ছেলেটার (নাম সম্ভবত ওয়াসেক, ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসামের ফাইনালিস্ট ছিলো) কথা আলাদা করে বলতে হবে, অনেক ভালো পারফর্ম করেছে। অন্যদিকে বন্ধুর চরিত্রে সৌভিক বেশ ভালো করলেও, ফ্যামিলি ফ্রেন্ডের চরিত্রে “ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ম্যান” চ্যাম্পিয়ন বাধনের অভিনয় খুবই হতাশাজনক ছিলো। এই ফিকশনের বড় নেগেটিভ দিক ছিলো এটার এন্ডিং। হুট করেই শেষ হয়ে গেলো। একটু বেশিই তাড়াহুড়া হয়ে গেছে এখানে। নাটকের মাঝখানেও কিছু সময় একটু খাপছাড়া লেগেছে। এগুলো বাদে পুরো নাটকটাই খুব উপভোগ্য ছিলো। সন্ধির মিউজিক বেশ ভালো লেগেছে। ফিকশনের ডায়ালোগ গুলোও চমৎকার। স্পেশালি স্পর্শিয়াকে দেখার পর সৌভিকের কথা শুনে অনেক্ষন হেসেছি।
রেটিং: ৭.০/১০
ইউটিউব লিংকঃ https://youtu.be/h0y38asyCXU
.
(১) কেউ জানে না!
এবারের ক্লোজআপ কাছের আসার অফলাইন গল্পের থিম অনুযায়ী এই গল্পটা আমার সবচেয়ে বেশি উপযোগী মনে হয়েছে। এটাতে এই যুগের অনেক ছেলেমেয়েরাই কিভাবে অনলাইনে মিথ্যা বলে – চাপা মেরে সম্পর্ক করতে যায়, শোঅফ করে তা চমৎকার ভাবে উঠে এসেছে। যে কেউ গল্পটা আশেপাশের মানুষের লাইফের সাথে রিলেট করতে পারবে। গল্পটা সিম্পল, কিন্তু বাস্তবধর্মী। সাথে ছিলো চমৎকার চিত্রনাট্য আর ডায়ালোগ। এগুলোর পাশাপাশি আরো বেশকিছু পজেটিভদিক ছিলো এই নাটকে। শুরুতেই মিউজিক আর সিনেমাটোগ্রাফির কথা বলতে হবে। ৩টা গল্পের মধ্যে বেস্ট মিউজিক ছিলো এটাতে, গানটাও দূর্দান্ত। একবার শুনলেই অদ্ভুত একটা ফীল চলে আসে। পুরো ফিকশনে কিছু কিছু দৃশ্যের চিত্রায়ন এখনো চোখে লেগে আছে। স্পেশালি বলতে হবে গানের শেষ দিকে বৃষ্টির মধ্যে কালো ছাতা আর কালো পোশাক পরা অনেক লোকের ভিড়ে- মেহজাবিন আর জোভান লাল ড্রেস পরে কালারফুল ছাতা নিয়ে হেঁটে যাবার দৃশ্যটা জাস্ট অসাধারণ ছিলো, ঠু ফিল্মি! এগুলোর সাথে ছিলো চমৎকার এডিটিং, প্রোডাকশন ডিজাইন, লাইটিং, আর কালার কারেকশন। এই ফিকশনের আরেকটা প্লাস পয়েন্ট ছিলো মেহজাবিনের অভিনয়। শুরুতে পার্টিতে সবাইকে জোর করে গান শুনানো আর বাজারে সবজি দামাদামি করার দৃশ্য দুইটা বেস্ট। মেহজাবিনের অভিনয়ে এত ইম্প্রভমেন্ট! ভাবাই যায় না। এই নাটকের কয়েকটা দিক একটু খারাপও লেগেছে। আগের নাটকের মত এটাতেও এন্ডিং ভালো লাগেনি, বেশি তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। আগের ২টা ফিকশনের চেয়ে এটার ড্যিওরেশন ৪-৫ মিনিট কম ছিলো, চাইলেই ডিরেক্টর সময় নিয়ে এটাকে সুন্দর করে শেষ করতে পারতো কিন্তু ছাদে গিয়ে হঠাত তাড়াহুড়া করে শেষ হয়ে গেলো। মূলত ৩টা নাটকেই এন্ডিং টা তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। নাটকে মেহজাবিনের সাথে মূল চরিত্রে জোভানের অভিনয়ও ভালো লেগেছে, সাথে তার বন্ধুদেরও। তবে মেহজাবিনের বোন-দুলাভাইয়ের পারফরমেন্স একটু বেশিই ভালো ছিলো, স্পেশালি দুলাভাইয়ের চরিত্রে থাকা তারেক রহমানের অভিনয়। সবমিলিয়ে বেশ উপভোগ্য একটা নাটক। ডিরেক্টর আর বি প্রীতম আর রান আউট প্রোডাকশনের আরেকটা কাজ ভাল লাগার লিস্টে যুক্ত হলো।
রেটিং: ৭.৫/১০
ইউটিউব লিংকঃ https://youtu.be/bsfeI0mCKQM