কেউ তোমাকে পছন্দ করবে এই আশায় নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলো না...তুমি যেমন আছ তেমনই থাকার চেষ্টা কর... যে তোমাকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসবে সে সত্যিকারের তোমাকেই ভালোবাসবে...

Definition List

ঈদে পকেটমারের শিকার হওয়ার পূর্ব লক্ষণ:


ঈদের এই ছুটিতে আপনি নিশ্চয় কোনো স্থানে বেড়াতে গিয়েছেন বা যাবেন। যে স্থানেই যান না কেন, আপনার আশেপাশে কোনো পকেটমার আছে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। পকেটমারের খপ্পরে পড়তে পারেন এমন কিছু কারণ নিয়ে প্রতিবেদন  থাকছে আজ ।

* সঙ্গে বেশি টাকা নিয়ে চলাচল করা
ছিনতাইকারী এবং পকেটমাররা সাধারণত তাদেরই টার্গেট করে থাকে যাদের কাছে বেশ টাকাপয়সা আছে। কেননা এভাবে তারা একবারে অনেক টাকা হাতানোর সুযোগ পায়। আপনি যদি বেশি পরিমাণ টাকা সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন, বিশেষ করে টাকা বহনের ছোট ব্যাগ সঙ্গে থাকে, তাহলে সহজেই পকেটমারের নজরে পড়তে পারেন। তাছাড়া আপনি যদি এমন কোনো এলাকায় চলাফেরা করেন যেখানে পকেটমার-ছিনতাইকারীর উৎপাত আছে, তাহলে এমন কোনো কিছু করা উচিত হবে না যেটাতে বোঝা যায় যে আপনার কাছে বেশ টাকা আছে। আপনার টাকা-পয়সা এবং দামি জিনিস অর্থাৎ গয়না এবং অন্যান্য নিজ বাড়িতে নিরাপদে রাখুন। অনেকসময় জিনিসপত্র বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও চুরির শিকার হতে পারেন। সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।

* আপনার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র হাতড়ে দেখা
আপনি ছিনতাই বা পকেটমারি হওয়ার চিন্তায় থাকলে অনেক সময় নিজের কাছে থাকা ব্যাগ বারবার খুলে বা অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখেন। নিজেকে রক্ষা করার এই পদক্ষেপ অনেকসময় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কেননা আপনার আশেপাশে থাকা ছিনতাইকারী বা পকেটমার এভাবে টের পেয়ে যায় যে আপনি আপনার মূল্যবান জিনিসপত্র কোথায় রেখেছেন। এ বিষয়ে গবেষক জেন টার্নার বলেন, ‘পুরুষের কোট অথবা জ্যাকেটে এবং ব্যাগে অনেকগুলো পকেট থাকে। মানিব্যাগ, টাকা এবং ক্রেডিটকার্ড কোনো না কোনো পকেটে থাকে। মূলত একজন পকেটমার বা চোরের পক্ষে আপনার সবগুলো পকেট খোঁজা সম্ভব নয়। এ কারণে আপনি যখন আপনার পকেট হাতড়ে দেখেন, তখন সে জেনে যায় যে আপনি আপনার মূল্যবান জিনিসপত্র এবং টাকা কোথায় রেখেছেন।’ এমনকি আপনি আপনার জিনিসপত্রে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেও তারা বুঝে যায়। এ কারণে পকেটমারের খপ্পরে পড়ার চিন্তায় থাকলে আপনার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র বারবার হাতড়ে দেখতে যাবেন না। প্রয়োজনে এসব চিন্তা বাদ দিয়ে অন্য চিন্তা করুন।

* অচেনা কোনো জায়গায় অমনোযোগী হওয়া
পকেটমাররা সাধারণত আপনার অমনোযোগী হওয়ার সুযোগে থাকে। তাছাড়া আপনি কোনো জায়গায় অপরিচিত হলে সেটার সুযোগ নিতে তারা সিদ্ধহস্ত। এ কারণে তারা বিভিন্ন ভ্রমণের স্থানে ঘুরঘুর করে। কোনো জায়গায় বেড়াতে গিয়ে আপনি যদি ম্যাপ দেখতে অথবা গুগল ম্যাপে কোনো জায়গা খুঁজে বের করায় ব্যস্ত থাকেন তাহলে পকেটমাররা আপনার কাছ থেকে যেকোনো জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে। অচেনা কোথাও আটকে গেলে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন এবং আপনার চারপাশ সম্পর্কে চৌকস থাকুন।

* কিছু মানুষ দল ধরে আসলো এবং আলাদা হয়ে গেল
অনেকসময় দেখা যায় জাদুঘর বা কোনো ভ্রমণের স্থানে কিছু মানুষ দল ধরে আসলো এবং হুট করে তারা আলাদা হয়ে গেল। ব্যাপারটা এমন যে তারা কেউ একসঙ্গে নয়, একা। এরকম দেখলে তাদের থেকে দূরে থাকুন কেননা তারা যথাসম্ভব পকেটমারি অথবা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে এসেছে। পকেটমাররা সাধারণত একা একা কাজ করে এবং তারা মানুষকে তাদের কুকর্মের শিকার বানানোর জন্য আলাদা হয়ে যায়। তারা ভালো মানুষ সেজে থাকার চেষ্টা করে। দেখা গেল মোবাইলে কথা বলছে, আসলে সাথীসঙ্গীদের সঙ্গে মিলে পরিকল্পনা করছে কিছু একটা করার জন্য।

* কারো পকেটমার বলে চিৎকার দিয়ে ওঠা
আশেপাশে পকেটমার বা ছিনতাইকারী আছে কিনা সেটা বোঝার এটা অনেক বড় একটি পদ্ধতি। আপনি হয়তো চিন্তাও করতে পারছেন না যে এমনটি হতে পারে। আপনি হয়তো ভাববেন যে, কেউ পকেটমারির শিকার হয়ে চিৎকার করেছে। কিন্তু অনেকসময় পকেটমাররা নিজেই এমন চিৎকার করে ওঠে। এটা করার ফলে ভ্রমণকারীরা ভয় পেয়ে যায় এবং কাছে থাকা জিনিসপত্র হাতড়ে দেখা শুরু করে এবং পকেটমাররা এটিরই সুযোগ নিয়ে থাকে।

* আপনার মানিব্যাগ পেছনের পকেটে রাখা
আপনি মূল্যবান জিনিসপত্র রাখলে সেগুলো সামনের পকেটে রাখুন। যেকোনো পোশাকের সামনের পকেটগুলো সাধারণত আকারে ছোট এবং বেশ আঁটসাঁট হয়ে থাকে। একজন পকেটমারের পক্ষে সেখান থেকে কিছু বের করে নেওয়া বেশ শক্ত কাজ এবং কেউ সেখানে হাত দিলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন। তাছাড়া আপনি যদি অপরিচিত এবং গ্যাঞ্জামপূর্ণ কোথাও থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার পেছনের পকেট বেশ ঝুঁকিতে থাকবে। আপনার পেছনের পকেট বোতাম দিয়ে আটকানো থাকলেও পকেটমাররা খুব সহজেই সেখান থেকে আপনার মানিব্যাগ বা মূল্যবান কিছু হাতিয়ে নিতে পারে। অনেকসময় ব্লেড দিয়ে আপনার পকেট কেটে মানিব্যাগ বের করে নেওয়ারও যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।

* রাস্তাঘাটে অযথা কোনো ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি হওয়া
পকেটমাররা এটা খুব ভালো করে জানে যে, মানুষজন রাস্তাঘাটে কোনো ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি দেখলে সেটার দিকে একবার ঢুঁ মারবেই। সুতরাং তারা নিজে থেকেই রাস্তাঘাটে একটি নাটক সাজিয়ে নেবে যাতে সেখানে ভিড় জমে যায়। এই সুযোগে তাদেরই একজন পকেটমারি শুরু করে দেবে। আইডেন্টিটি থেফট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিষ্ট এবং পিকপকেট ডটকমের লেখক জেন টার্নার বলেন, ‘পকেটমাররা সুযোগে থাকে কখন আপনি আপনার মানিব্যাগ এবং কাছে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবেন।’ তাছাড়া পকেটমাররা মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য অসুস্থ হওয়া, মাটিতে পরে যাওয়ার অভিনয় করে এবং এই সুযোগে আপনার মূল্যবান জিনিস অথবা টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়।

* আপনার সঙ্গে থাকা ব্যাগ চেয়ারে ঝুলিয়ে রাখা
আপনার পরিচিত কোনো স্থানে কাঁধের ব্যাগ, কোট বা জ্যাকেট আপনি চেয়ারে ঝুলিয়ে রাখতেই পারেন। কিন্তু অচেনা এবং ভিড়ময় কোনো জায়গায় অবশ্যই আপনি এই কাজটি করতে চাইবেন না। দক্ষ চোরেরা চলমান অবস্থায়ই আপনার ব্যাগ আপনার অজান্তেই উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং আপনার সঙ্গে থাকা ব্যাগ এমন কোনো জায়গায় রাখুন যেন আপনি সেটা সবসময় চোখে চোখে রাখতে পারেন, যেমন: কোলের উপর বা পায়ের সামনে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি আপনার ব্যাগ চেয়ারের সঙ্গে ভালোমতো আটকে রাখুন যাতে সহজে সেটা কেউ হাতিয়ে নিতে না পারে।

* রাস্তাঘাটে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা
মনোযোগ নষ্ট করার অন্যতম একটা মাধ্যম হচ্ছে প্রযুক্তি। আপনি যখন রাস্তাঘাটে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছেন, তখন সাধারণত আপনি আপনার চারপাশে খেয়াল রাখতে ভুলে যান। ফলে পকেটমার অথবা চোরেরা সহজেই আপনাকে আক্রমণ করার সুযোগ পেয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে চোরদের পক্ষে হেডফোনটি খুলে মোবাইল নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপারই না। আপনি হয়তো মনে করবেন হেডফোনে কোনো সমস্যা হয়েছে অথবা মোবাইলের চার্জ শেষ। ব্যাপারটি ধরে ফেলার আগেই সেই চোর আপনার চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে যাবে।

* অপরিচিত কারো যেচে গল্প জমানো
বেশ ভিড়ময় কোনো জায়গায় অপরিচিত কারো সঙ্গে আমরা অনেকসময় ভালোরকম গল্প জমিয়ে ফেলি এবং পকেটমাররা সাধারণত এটারই সুযোগ নিয়ে থাকে। পকেটমারদের অন্যতম একটি পুরোনো পদ্ধতি হচ্ছে, ভিড়ের মধ্যে কেউ আপনাকে ইচ্ছা করে ধাক্কা দেবে এবং এই সুযোগে অন্য আরেকজন আপনার মানিব্যাগ বা অন্যান্য মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে নেবে। বাসে বা ট্রেনে যাতায়াতের সময় ভিড়ের মধ্যে আপনার কাছে অবস্থান নেওয়া লোকগুলোর ওপর নজর রাখুন। আপনি হয়তো সহজাতপ্রবৃত্তিবশত তাদের দিকে পেছন দিয়ে দাঁড়াবেন এবং এই সুযোগেই পকেটমার অথবা চোরেরা তাদের কাজ সেরে ফেলবে। কারো দিকে পেছন না দিয়ে বরং আপনি অন্য কোথাও অবস্থান নিন। কাউকে সন্দেহ হলে তাকে চোখে চোখে রাখুন। কেননা কোনো চোর বা পকেটমার নিজের পরিচয় প্রকাশ করে চুরি করতে চাইবে না।

* ম্যাপ দেখা বা অন্য কোনো কাজে সাহায্য করতে চাওয়া
অনেকসময় পকেটমাররা পর্যটক সেজে কাউকে ম্যাপ দেখা বা কোনো জায়গা খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেকসময় তারা আপনার মুখের সামনে ম্যাপটি মেলে ধরে পকেটমারি অথবা চুরির চেষ্টা করতে পারে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। অনেকসময় সত্যিকার অর্থেই কারো সাহায্যের দরকার হতে পারে। সেজন্য কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে সহজ ভাষায় না করে দিন। আপনি যদি নিতান্তভাবেই কাউকে সাহায্য করতে চান, সতর্ক থাকুন; কেননা এমন হতে পারে যে আপনার ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে আরেকজন চুরি করে ফেললো। ভালো হয় যদি আপনি বিশ্বাসযোগ্য পরিচিত কারো সঙ্গে ঘুরতে বের হোন এবং আপনার মূল্যবান বস্তুগুলোর ওপর সবসময় কড়া নজর রাখুন।

* আপনার সামনে কোন জিনিস ফেলে দেওয়া
আপনাকে হতবুদ্ধি করে কোনো জিনিস হাতিয়ে নেওয়ার এটা অন্যতম একটা পদ্ধতি। ভিড়গ্যাঞ্জামের অজুহাতে চোর এবং পকেটমারেরা অনেকসময় আপনার কাছাকাছি কফি, আইসস্ক্রিম বা অন্য কিছু ফেলে দিতে পারে। এমনকি তারা যাদের টার্গেট করে সরাসরি তাদের গায়ের উপরেও এগুলো ফেলে দেয়। এভাবে তারা সেই ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য বাধ্য করে বা কোনো না কোনোভাবে হতবুদ্ধি করে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। সাধারণত এটিএম বুথের আশেপাশে এগুলো বেশি হয়। কেননা সেখান থেকে কেউ টাকা বের করে চলে যাওয়ার সময় পকেটমারেরা তাদের কার্যসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ঘোরাঘুরি করে। কেউ আপনার গায়ে কিছু ফেলে দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করলে সতর্ক থাকুন। কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সাহায্য নয়, আপনার কাছ থেকে কিছু চুরি অথবা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসে।

* আপনার টের পাওয়ার ধারণা
কেউ সাধারণত পকেটমারির সময় টের পান না যে তার সঙ্গে এমন কিছু ঘটে গেছে। কেননা বেশিরভাগ পকেটমাররাই বেশ দক্ষ হয়ে থাকে। এ বিষয়ে টার্নার বলেন, ‘আমি সবসময়ই বলি একজন দক্ষ পকেটমার আমার কাছ থেকে সবকিছু হাতিয়ে নেবে এবং আমি টেরও পাব না।’ আপনি যদি মনে করেন যে, কেউ আপনার পকেট মারলে আপনি অবশ্যই তা টের পাবেন তাহলে আপনি বোকার রাজ্যে বসবাস করছেন। টার্নার এ বিষয়ে আরো বলেন, ‘পকেটমাররা খুব ভালো করে জানে যে তারা কিছু চুরি করলে আপনি সেটা ধরতেই পারবেন না এবং তারা বেশিরভাগক্ষেত্রে এটারই সুযোগ নিয়ে থাকে।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
Blogger দ্বারা পরিচালিত.