সবচেয়ে জনপ্রিয় ১৪ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ
কোডিং শেখার জন্য এখনকার সময়টা খুব উপযোগী। কারণ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রোগ্রামারদের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রোগ্রামার হতে হলে আপনার কমপক্ষে একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা প্রয়োজন।
৮০০’র বেশি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ রয়েছে। সহজে চাকরির বাজার ধরতে কোনটা শেখা দরকার? এটা জানার সহজ উপায় হতে পারে- বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কোনগুলো সেটা জানা।
প্রোগ্রামিংয়ের প্রশ্ন-উত্তরভিত্তিক সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইট ‘স্ট্যাক ওভারফ্লো’ সম্প্রতি ১ লাখের বেশি প্রোগ্রামারের সঙ্গে কথা বলে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ২৫টি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের একটি তালিকা তৈরি করেছে। প্রোগ্রামিং ও প্রোগ্রামারদের ক্যারিয়ার সংক্রান্ত ‘২০১৮ সালের ডেভেলপার জরিপ’ প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের এই তালিকা তুলে ধরেছে স্ট্যাক ওভারফ্লো। এ প্রতিবেদনে জনপ্রিয় ১৪টি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তুলে ধরা হলো।
১. জাভাস্ক্রিপ্ট : নামের মিল থাকলেও, জাভাস্ক্রিপ্ট আসলে জাভার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ১৯৯৫ সালে নেটস্কেপের প্রকৌশলী ব্রেন্ডন আইক জাভাস্ক্রিপ্ট তৈরি করেন, যেটা মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে নেটস্কেপ ২ (ব্রাউজার) এর সঙ্গে। এর নাম দেয়া হয়েছিল লাইভস্ক্রিপ্ট।
কিন্তু মার্কেটিং কৌশলের গ্যাড়াকলে পড়ে এর নাম জাভাস্ক্রিপ্ট হয়ে যায়, সান মাইক্রোসিস্টেমের জাভা ল্যাংগুয়েজের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করার জন্য।জাভাস্ক্রিপ্ট একটি অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড, ডায়নামিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় ভাবে তৈরি করতে এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়। এটি ওয়েবের জন্য ব্যাপক ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলোর একটি এবং বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয়।
২. এইচটিএমএল : প্রকৃত অর্থে এটি কোনো প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ নয় বরং একটি মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ যা একসারি মার্কআপ ট্যাগ এর সমন্বয় গঠিত। প্রতিটি ওয়েবসাইট গঠনের ভিত্তি এটি।
৩. ক্যাসকাডিং স্টাইল শিট বা সিএসএস : এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজটি ওয়েবসাইট এবং ব্রাউজারভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন ডিজাইনের জন্য ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৪. এসকিউএল : এসকিউএল বা স্ট্রাকচার্ড কুয়েরি ল্যাঙ্গুয়েজ হলো ডেটাবেজ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত একটি কুয়েরি ল্যাঙ্গুয়েজ। এসকিউএল ব্যবহার করে ডাটাবেজ তৈরি, ডাটাবেজের তথ্য হালনাগাদ, নতুন তথ্য সংযোজন, তথ্য বিয়োজন ইত্যাদি করা যায়। বেশিভাগ ক্ষেত্রে অন্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়, যেমন: পিএইচপি।
৫. জাভা : সান মাইক্রোসিস্টেম ১৯৯১ সালে জাভা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ উদ্ভাবনের করেছিল মূলত টেলিভিশন সিস্টেমের জন্য। পরবর্তীতে ওরাকল সান মাইক্রোসিস্টেমকে কিনে নেওয়ার পর জাভাকে অতি দ্রুত বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের একটিতে পরিণত করে। বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস তৈরির সবচেয়ে কমন উপায় হিসেবে জাভা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৬. ব্যাশ/শেল : শেল প্রকৃত অর্থে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ নয়। বরং একটি শেল স্ক্রিপ্ট অপারেটিং সিস্টেমকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি পূর্বনির্ধারিত কমান্ডের তালিকা চালানোর নির্দেশ দেয়। উদাহরণস্বরূপ: একটি শেল স্ক্রিপ্ট ‘.bmp’ ফাইলকে ‘.jpg’ ফাইলে কনভার্ট করতে পারে অপারেটিং সিস্টেমের মতো।
৭. পাইথন : ১৯৮৯ সালে পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ উদ্ভাবন করেন নেদারল্যান্ডের সিডব্লিউআই’র গবেষক গুইডো ভ্যান রস্যিউম। এটি তৈরির সময় প্রোগ্রামের পঠনযোগ্যতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রোগ্রামার যাতে সহজে ও কম সময়ে বেশি কাজ করতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অনেক প্রোগ্রামার বিশ্বাস করেন যে, প্রোগ্রামিং শুরু করার জন্য এটিই সবচেয়ে সহজ ল্যাঙ্গুয়েজ।
৮. সি# : সি শার্প একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। মাইক্রোসফট তাদের আগের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলোর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দূর করার লক্ষ্যে এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ উদ্ভাবন করে। সি শার্প ব্যাপক জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জাভার প্রতিদ্বন্দ্বী। এটি প্রায় জাভার মতো একটি ল্যাঙ্গুয়েজ হলেও পুরোপুরি একরকম নয়। ব্যবসায়িক সফটওয়্যার তৈরিতে সি শার্প প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বেশি ব্যবহৃত হয়।
৯. পিএইচপি : প্রচুর ডেটা সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট এবং অ্যাপসে এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার হয়ে থাকে। এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভার-সাইড স্ক্রিপ্টিং-এর জন্য ব্যবহৃত হয়। ফেসবুকের একটা বিরাট অংশ ডেভেলপ করা পিএইচপিতে। ফেসবুক পিএইচপির ওপর এতটাই নির্ভরশীল যে তারা নিজেরাই পিএইচপির উন্নয়নের জন্য নতুন পিএইচপি ইনজিন রিলিজ করেছে। ওয়ার্ডপ্রেস, উইকিপিডিয়াও ডেভেলপ করা পিএইচপিতে। তবে অনেক প্রোগ্রামারের আবার পিএইচপি নিয়ে বিরক্তিও রয়েছে।
১০. সি++ : সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের একটি শাখা হচ্ছে সি প্লাস প্লাস। এটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। ১৯৮৩ সালে বিয়ারনে স্ট্রোভস্ট্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের এটিএন্ডটি বেল ল্যাবরেটরিতে এটি ডেভেলপ করেন। এটি সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এবং সফটওয়্যার শিল্পে বহুল ব্যবহৃত। যেমন- সিস্টেম সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার, ডিভাইস ড্রাইভার, এম্বেডেড সফটওয়্যার, উচ্চ মানের সার্ভার ও ক্লায়েন্ট অ্যাপ্লিকেশন, বিনোদন সফটওয়্যার যেমন- ভিডিও গেম ইত্যাদি ক্ষেত্রে সি প্লাস প্লাস ব্যবহৃত হচ্ছে। সি প্লাস প্লাস পরবর্তী বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজকে প্রভাবিত করেছে যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাভা।
১১. সি : এখনো বহুল ব্যবহৃত প্রাচীন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সি। ৭০ দশকের প্রথম দিকে বেল ল্যাবে কাজ করার সময় সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করেন ডেনিস রিচি। ১৯৭৮ সালে এই ভাষার কিংবদন্তির ম্যানুয়াল ‘দ্য সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ’ প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়।
১২. টাইপস্ক্রিপ্ট : মাইক্রোসফটের তৈরি এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজটি তুলনামূলক ভাবে নতুন বলা যেতে পারে। ২০১২ সালে উদ্ভাবনকৃত টাইপস্ক্রিপ্ট প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যাপক জনপ্রিয় জাভাস্ক্রিপ্টের মতোই। বড় অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য টাইপস্ক্রিপ্ট তৈরি করা হয়েছে।
১৩. রুবি : এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে কোড লেখা এবং পড়া- দুটোই সহজ হওয়ায় এটি ব্যাপক প্রশংসিত। রেইলস নামে এর একটা ফ্রেমওয়ার্ক আছে যার কারণে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন বানানো সহজতর। রুবির অফিসিয়াল স্লোগান হলো ‘এ প্রোগ্রামার’স বেস্ট ফ্রেন্ড’। মানে, একজন প্রোগ্রামারের সেরা বন্ধু।
১৪. সুইফট : সহজ ও উন্নত উপায়ে সফটওয়্যার তৈরির জন্য ২০১৪ সালে এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করে অ্যাপল। আইফোনের অ্যাপস বানানোর জন্য এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জনপ্রিয়।
তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার