টি-টোয়েন্টিতে কত রানকে নিরাপদ স্কোর বলা যায়? বাংলাদেশের বোলারদের জন্য অন্তত দুইশ রানও নিরাপদ নয়!
মিরপুরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের করা ১৯৩ রান যে শ্রীলঙ্কা টপকে গেল ২০ বল বাকি থাকতেই! লঙ্কানরা ম্যাচ জিতেছে ৬ উইকেটে।
ত্রিদেশীয় সিরিজ ও টেস্ট সিরিজ বাংলাদেশ হেরেছিল ব্যাটিং ব্যর্থতায়। টি-টোয়েন্টিতে অন্তত ব্যাটসম্যানদের দায় দেওয়া যাবে না। এবার দলকে ডোবালেন বোলাররা।
অথচ ম্যাচটা জয় দিয়ে রাঙিয়ে রাখার কত উপলক্ষই না পেয়েছিল চারজনের অভিষেক করানো বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের প্রথম ফিফটি, চার বছর পর মুশফিকের পঞ্চাশ, এই ফরম্যাটে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড- সবকিছুই ম্লান হলো হারের হতাশায়।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয় দারুণ। চার বোলারকে দিয়ে প্রথম চার ওভার করিয়েছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু সাফল্য এনে দিতে পারেননি কেউই। চার ওভারে বিনা উইকেটে ৪৭ রান তোলে মিরপুরের দর্শকদের নীরব বানিয়ে দেন দুই লঙ্কান ওপেনার।

পঞ্চম ওভারে গুনাথিলাকাকে ফিরিয়ে ঝড় থামান অভিষিক্ত নাজমুল ইসলাম অপু। তবে এই উইকেটে উইকেটকিপার মুশফিকের অবদানও কম ছিল না। বেরিয়ে এসে স্লপ সুইপ করতে চেয়েছিলেন গুনাথিলাকা। বল ধরেই স্টাম্প ভেঙে দেন মুশফিক। ৩০ রান করে ফেরেন লঙ্কান ওপেনার।
আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিস হয়ে ওঠেন বিধ্বংসী। সপ্তম ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানকে হাঁকান টানা তিন চার, হ্যাটট্রিক! অষ্টম ওভারে আফিফের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটি স্পর্শ করেন ২৫ বলে। তিন বল পরই তাকে (২৭ বলে ৫৩) লং অফে সৌম্যর ক্যাচ বানিয়ে ফেরান আফিফ।
পরের ওভারে নতুন ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গাকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নেন নাজমুল। শ্রীলঙ্কার স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৯২। দ্বাদশ ওভারে রুবেল হোসেন যখন নিরোশান ডিকভেলাকে ফেরালেন, তখন সমীকরণ অনেকটাই সহজ করে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। ৫০ বলে চাই ৬৫ রান, হাতে ৬ উইকেট।
বাংলাদেশের বোলারদের চোখের জল নাকের জল এক করে বাকি কাজটা সেরেছেন থিসারা পেরেরা ও দাসুন শানাকা। দুজনের ৩০ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৬ রানের জুটিতে স্রেফ উড়ে গেছে বাংলাদেশ। ১৮ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন থিসারা। ২৪ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত ৪২ রান শানাকার।

টি-টোয়েন্টিতে এটিই শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। মিরপুরেও সর্বোচ্চ। শ্রীলঙ্কা এর আগে ১৭৩ রান তাড়া করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আজ নতুন রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি এই ফরম্যাটে টানা ৮ হারের বৃত্তও ভাঙল শ্রীলঙ্কা।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তার টস-ভাগ্যটা ভালোই বলতে হয়। চট্টগ্রামে টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেকে টস জিতেছিলেন। এবার টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্বের প্রথম ম্যাচেও সেটার পুনরাবৃত্তি করলেন।
দলে ছয়জন নতুন মুখ থাকায় আজ একাধিক খেলোয়াড়ের অভিষেকের সম্ভাবনা ছিলই। হয়েছেও তাই। আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় আরিফুল হক, আফিফ হোসেন, জাকির হাসান ও নাজমুল ইসলাম অপুর। চোটের কারণে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের খেলা নিয়ে শঙ্কা জেগেছিল আগের দিনই। আজ সেই শঙ্কা সত্যি হয়েছে তামিমের ক্ষেত্রে। মুশফিক অবশ্য উইকেটকিপারের দায়িত্ব নিয়েই একাদশে জায়গা করেন।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা হয় উড়ন্ত। অভিষিক্ত জাকিরকে নিয়ে ইনিংস শুরু করতে নামেন সৌম্য সরকার। মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই শেহান মাদুশানাকাকে চার হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলেন সৌম্য। এক বল পরেই ছক্কা। দুই ওপেনার প্রথম ওভারেই ১৭ রান তোলে বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দেন। প্রথম তিন ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৪১ রান।

চতুর্থ ওভারে স্পিনার গুনাথিলাকার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন জাকির হাসান। অভিষেকে ৯ বলে ১০ রান করেন জাকির। তিনে নামা মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং অব্যাহত রাখেন সৌম্য। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই ইনিংসেই চল্লিশ পার করে আউট হলেও আজ তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটি, ৩০ বলে। তাতে ১০ ওভারেই বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ১০০।
ফিফটির পর অবশ্য সৌম্য নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি। ১১তম ওভারে জীবন মেন্ডিসের প্রথম বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৩২ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় ৫১ রান করেন সৌম্য। এক বল পর আরেক অভিষিক্ত আফিফকে ফেরান জীবন মেন্ডিস। তিন বলে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোর তখন ৩ উইকেটে ১০০।
সেখান থেকে মুশফিক ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ৭৩ রানের জুটি বাংলাদেশকে দেয় বড় সংগ্রহ। চার বছর পর মুশফিক তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ফিফটি। ২০১৩ সালে এই মিরপুরেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন প্রথম ফিফটি (৫০)।
মুশফিক ফিফটি করলেও মাহমুদউল্লাহ পারেননি। ৩১ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৪৩ রান করেন । ঢাকা টেস্টে সুযোগ পেয়ে দুই ইনিংসে ১ রান করেছিলেন সাব্বির রহমান। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ১-এর ঘর থেকে বেরোতে পারলেন না টি-টোয়েন্টিতেও। থিসারা পেরেরার লেগ স্টাম্পের বল স্কুপ করতে গিয়ে যেভাবে বোল্ড হলেন, তাতে তার পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল আবার।

শেষ ওভারের পঞ্চম বলে পেরেরাকে চার হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে এই ফরম্যাটে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ এনে দেন মুশফিক। ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯০ রান ছাড়িয়ে বাংলাদেশ গড়ল নতুন রেকর্ড। ৪৪ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায় ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৬৬ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। কিন্তু সব অর্জনই বৃথা গেল বোলারদের ব্যর্থতায়।
টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আর কোনো সম্ভাবনা নেই বাংলাদেশের। আগামী রোববার সিলেটে দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি জিতে ট্রফিটা অন্তত ভাগ করে নিতে পারবে স্বাগতিকরা?
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৯৩/৫ (জাকির ১০, সৌম্য ৫১, মুশফিক ৬৬*, আফিফ ০, মাহমুদউল্লাহ ৪৩, সাব্বির ১, আরিফুল ১*; জীবন মেন্ডিস ২/২১)
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৯৩/৫ (জাকির ১০, সৌম্য ৫১, মুশফিক ৬৬*, আফিফ ০, মাহমুদউল্লাহ ৪৩, সাব্বির ১, আরিফুল ১*; জীবন মেন্ডিস ২/২১)
শ্রীলঙ্কা: ১৬.৪ ওভারে ১৯৪/৪ (কুশল ৫৩, গুনাথিলাকা ৩০, থারাঙ্গা ৪, শানাকা ৪২*, ডিকভেলা ১১, থিসারা ৩৯*; নাজমুল ২/২৫, আফিফ ১/২৬, রুবেল ১/৫২)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কুশল মেন্ডিস।