কেউ তোমাকে পছন্দ করবে এই আশায় নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলো না...তুমি যেমন আছ তেমনই থাকার চেষ্টা কর... যে তোমাকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসবে সে সত্যিকারের তোমাকেই ভালোবাসবে...

Definition List

জীবনের গল্প রিহান

মেয়েটি খুব মনে করে রিহান কে। সেদিনও ছিলো রিহানের পাশে চারতলা ভবনের হাসপাতালে।
.
বছর তিনেক আগে রিহান প্রপোজ করেছিল মেয়েটিকে। শান্তা নামের মেয়েটি যেমন ছিল শান্ত তেমন শান্তশিষ্ট স্বভাবের। বাসায় টিউশন করায়। হাত খরচের থেকে উপরি টাকা মা'কে দিয়ে দেয়।
.
রিহানের সাথে পরিচয় প্রায় পাঁচবছর। অদ্ভুত ভাবে পরিচয়টা হয়েছিল। যেটা স্বাভাবিক সিনেমায় ঘটে থাকে। রিহান আর সাথে বেকারত্ব। তাই বাসা থেকে খুব কম বের হতো, শান্তার সাথে দেখা করতে হলে আগে থেকে আর্থিক প্রিপারেশন নেয়া লাগতো। যদিও শান্তা কোন খরচ করাতে চাইতো না।পার্কে দেখা হতো যেখানে দশ টাকার বাদাম খেলে বিকালটা পার করা যেত।
.
মুগ্ধ বিকেলের সুর্যের সাথে রিহান-শান্তার হাসির ঝলক, হাতের স্পর্ষ, বারবার প্রকৃতিকে মুগ্ধ করে।
দুজনকে কাপল হিসেবে খুব মানিয়ে ছিল বেশ। শান্তা বলতো " আমার না চুড়ি পরতে বেশ ভালো লাগে সাথে লাল শাড়ি"।
.
অনেক সময় রিহান মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উপহার দিত লাল চুড়ি ইত্যাদি। তখন শান্তা খুব রাগ করতো। রাগটা ভাঙানোর জন্য স্পেশাল কিছু করা লাগতো রিহানের।
.
প্রায়সই রিহান তার স্বপ্নের কথা বলতো। স্বপ্নের পরিটা যে শান্তা তাকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিত। প্রত্যুত্তরে শান্তা বলতো "স্বপ্নটা কখন সত্যি হবে শুনি"। তখন রিহান নিশ্চুপ থাকতো কোন কথা বলতো না। হাতে হাত রেখে বেকার ছেলেটি শান্তাকে শুধু সান্তনাই দিত।
.
রিহানের বেকারত্বে চাপটা দিন দিন বাড়তে লাগলো। অনেক সময় শান্তা হাত খরচের টাকা দিত। মাঝেমধ্যে শান্তা বলতো এভাবে আর কতদিন চলবে? কিছু একটা কর, চাকরীটা কখন হবে..?
তখন আবারো নিশ্চুপ থাকতো রিহান।
হাত দিয়ে ধরে রাখতো হাতে যেখানে ছিল শুদ্ধ ভালোবাসার ছাপ, নেই কোন বিশ্বাসঘাতকতা। আছে শুধু দুটো মনের বিরহ প্রেম যেটা স্বপ্নকেও হার মানায়।
.
শান্তা একদিন রিহানকে বলল "আমাকে কথা দাও কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেনা।
রিহান বলল "একমাত্র মৃত্যুই আমাদের আলাদা করতে পারে, যেখানে কষ্ট কান্নার ভয় নেই সেখানে তো প্রেম। তোমায় ভালোবেসে মৃত্যুকে বরণ করতে রাজী আছি এর বিনিময়ে ভালোবাসাটুকু দিও।
.
এভাবে কয়েকদিন চলার পর শান্তার ফ্যামিলি শান্তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিল। শান্তা হতাশ। ফোন দিলো রিহানকে। রিহান কিছু বলতে চাইলো তার আগে ফোনটা কেটে গেলো। পরে রিহান শান্তার সাথে দেখা করে ২মাসের সময় চেয়েনিল।
চাকরীটা পেলেই বিয়ে করবে রিহান। খুব সুখি হবে, কথা দিয়েছিল শান্তাকে।
.
এর পরে শান্তার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারলো না। কারন শান্তার পরিবারের নিষেধ ছিল বিয়ের আগে যেন যোগাযোগ না করে।
.
অনেক খুঁজাখুঁজির প্রায় ৩মাস পর চাকরীর ব্যাবস্তা হলো। একটা কর্পোরেট অফিসে যব। ভালো বেতন। শান্তাকে ফোন দিল ফোন বন্ধ। ভীষণ দেরী করে ফেলেছে সে। বাসায় গেলো। বাসায় নাই শান্তা। খুব টেনশনে ডিপ্রেশন বেড়ে গেল।
রাস্তা দিয়ে হাটছে, হটাত বাস চাপা দিল রিহানকে। হাত থেকে পড়ে গেল চাকরীর জয়েনিং লেটার টা, রক্তাক্ত রাস্তা। এম্বুলেন্সের শব্দের নিরবতা শেষে জ্ঞান ফিরলো রিহানের। সে দেখতে পেলো পাশে আত্তীয়রা কাদছে, পাটা হারিয়ে ফেলেছে সে।
.
আফসোস শান্তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল সে জানতেও পারলো না।
.
বাস্তবতা:
(কিছু ভালোবাসা মরে পড়ে থাকে প্রকৃতির ছায়ায় বেকারত্বের বেড়াজালে। যখন মানুষটি বেকারত্ব ছেড়ে উটে আসে কর্ম জীবনে তখন হয়তো প্রিয় মানুষটি অন্য কারও হাত ধরে বসে আছে সাজানো কোন সংসারে)

Blogger দ্বারা পরিচালিত.