ঐতিহাসিক আইন, সুদানে ‘নারী খৎনা’ দণ্ডনীয় অপরাধ

সুদানের অন্তবর্তীকালীন সরকার ঐতিহাসিক এক আইন পাস করেছে। পহেলা মে থেকে দেশটিতে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা প্রথা ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন (এফজিএম) অর্থাৎ ‘নারী খৎনা’ দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বাড়িতে কিংবা হাসপাতালে কেউ এটা করলে তিন বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হবে। দেশটি তাদের অপরাধ আইনে পরিবর্তন এনে এটা সংযোজন করেছে। এর মধ্য দিয়ে নতুন এক যুগে প্রবেশ করলো আফ্রিকা মহাদেশের দেশটি।
বহু বছর ধরে সুদানে চলে আসছে বিভৎসা প্রথা নারী খৎনা। যেটার মাধ্যমে নারীদের উপরের অথবা ভেতরের লেবিয়া এবং ক্লিট কেটে ফেলা হয়। সেটা যে অভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে করা হয়, এমন নয়। এমন কাজে পারদর্শী গ্রামের কোনো নারীকে দিয়ে করানো হয়। যেটা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির।
এটা করার কারণে মূত্রনালীতে সংক্রমণ, জরায়ুর সংক্রমণ, কিডনির সংক্রমণ, সিস্ট, গর্ভধারণে অক্ষমতা ও ব্যথাযুক্ত শারীরিক সম্পর্কের মতো নানারকম সমস্যা দেখা দেয়।
জাতিসংঘের মতে সুদানের ১৪ থেকে ৪৯ বছর বয়সী যেকোনো নারীকে এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাদের উপরের অথবা ভেতরের লেবিয়া আংশিক কিংবা পুরোপুরিভাবে কেটে ফেলা হয়। কেটে ফেলা হয় ক্লিটও।
১৯৪৬ সালে দেশটি মারাত্মক পর্যায়ের নারী খৎনা নিষিদ্ধ করে। ১৯৮৩ সালে প্রেসিডেন্ট জাফর নিমেরি ক্ষমতায় আসার পর এটি বিলুপ্ত করেন এবং ঘোষণা দেন শরীয়াহ হবে আইনের ভিত্তি।
তখন এটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন তীব্র সমালোচনা ও বিরোধিতা করলেও কাজ হয়নি। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও দেশ— সুদানের এই বর্বরোচিত প্রথার বিলুপ্তি ঘটানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছিলো বহু বছর ধরে। অবশেষে তারা সফল হলো।
শুধু কি সুদান? মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, এশিয়া, উত্তর আমেরিকার অনেক দেশে রয়েছে এই প্রথা। সুদানের নারীদের তো মুক্তি মিললো, বাকি দেশগুলোর নারীদের মুক্তি মিলবে কবে?
তথ্যসূত্র : ইউনিসেফ, বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান