হেরেছি আমি জিতেছে তোমার ভালবাসা,
হেরেছি আমি জিতেছে তোমার ভালবাসা,
.
.
দরজার আড়ালে দারিয়ে মেয়েটির দিকে
তাকিয়ে আছি।আমি স্পস্ট দেখতে পারছি
মেয়েটি বাম হাতে একটা নুপুর নিয়ে ডান
হাত দিয়ে তার কাটা পায়ে আস্তে আস্তে
হাত বোলাচ্ছে আর বুকের মাঝে জমানো
.
.
দরজার আড়ালে দারিয়ে মেয়েটির দিকে
তাকিয়ে আছি।আমি স্পস্ট দেখতে পারছি
মেয়েটি বাম হাতে একটা নুপুর নিয়ে ডান
হাত দিয়ে তার কাটা পায়ে আস্তে আস্তে
হাত বোলাচ্ছে আর বুকের মাঝে জমানো
কস্ট নিয়ে আনমনে কাদছে।আমি প্রায়ই এই
কান্না দেখি কিন্তু আমারও মেয়েটির মত
বুকের মাঝে আহাজারি করা ছাড়া উপায়
দেখি নাহ।আমার মনের মাঝেও যে কস্ট
আছে,বেদনা আছে।নিজ চোখে নিজেরই
বউয়ের এক্সিডেন্ট এ তার একটা পা কাটা
আমার দু চোখে দেখতে হয়েছে।সেদিন কিছু
করার ছিল না আমার।সেদিনের পর থেকে
কেমন জানি বিষন্নতায় ভুগতাম।আমার
জন্যেইতো আমার বউয়ের এই অবস্থা।
.
এক্সিডেন্ট এর পরে যখন মেয়েটির হুস
ফিরেছিল তখন পা তুলতে গিয়েই বুঝেছিল
তার একটা পা চিরদিনের জন্যে হারিয়ে
গেছে।আমি সেদিনের তার চেহারার কথা
স্পস্ট দেখতে পারি,বুঝতে পারি।যে
চেহারায় ছিল শুধু ভালবাসা আর ভালবাসা।
ভালবাসার জন্যেইতো সে এমন করেছিল।
সেদিন হাসপাতালে মেয়েটিকে মানে
আমার বউকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
--পাগলামির একটা সীমা থাকা উচিত।এই
ভাবে কেও পাগলামি করে??এখন কি হবে
তোমার?
.
বউটা আমার হাতে হাত দিয়ে আমার হাত
আকড়ে ধরে থাকল।আমার চোখের দিকে
তাকিয়ে আমার বউটা যে করুন চেহারায়
তাকিয়ে ছিল।সে আমাকে বলেছিল,
--বেশ হয়েছে।এখন তো আমি তোমার কোলে
কোলেই ঘুরে বেরাবো বুঝলে।আরও বেশি
ভালবাসা চাই আমার।
.
আমি এই মেয়ের পাগলামি বুঝতে গিয়ে
মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যেতাম।কিসের
মধ্যে কি বলবে সে নিজেও জানে না।তা না
হলে নিজের পা হারানোর যন্ত্রনায় কেও এই
ভাবে ভালবাসার কথা জানায়?আমি
মন্ত্রমুগ্ধ,এই মেয়ের ভালবাসায় মন্ত্রমুগ্ধ।
.
বউয়ের ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।ওহ হো,ওর
তো একটা সুন্দর নাম আছে,"নীলাশা"।নী
লাশা আমাকে ডেকে বলল,
--দিহান এই ভাবে আর কতদিন?আমি বলছি
কি--------।
.
আমি নীলাশার কথা শেষ করতে দিয়েই ওর
হাতে হাত দিলাম।ওর দু গালে দু হাত দিয়ে
বললাম,
--দেখ নীলাশা,তুমি যা বলবে তা আমি
জানি।আর আমার পক্ষে সম্ভব নাহ দ্বিতীয়
বিয়ে করা।আমি বেশ আছি তোমাকে নিয়ে।
.
নীলাশা আমার হাতে তার হাত দিল।এই
হাতের প্রতিটা স্পর্শ আমার জানা।এই স্পর্শ
আমার ভালবাসার এক একটা অনুভুতির প্রমান।
নীলাশা আমাকে বলল,
--আমি তোমার দরজার আড়ালে দাড়ানো
দেখি দিহান।মেয়েরা ভালবাসার মানুষের
সব বুঝতে পারে।তুমি যে প্রত্যহ দরজার
আড়ালে নুপুর হাতে নিয়ে নিঃশ্বব্দে কান্না
কর সেটা আমি বুঝি।কিন্তু কি করবে বল?
আমার যে পা ই নেই।আমার যে নুপুর পড়া
বেমানান।
.
জানুয়ারির ২৬ তারিখ।দিনটি ছিল রবিবার।
অন্যদিনের থেকে আজকের দিনটি বেশ
আলাদা।আমি শহরের নাম করা ডাক্তারের
সাথে কথা বলে জেনেছি নীলাশার জন্যে
নকল পায়ের ব্যবস্থা করা যাবে।এই জন্যেই
আজকে আমি নীলাশাকে নিয়ে হসপিটালে
যাচ্ছি।আসার সময় মেয়েটির কত প্রশ্ন।কই
যাচ্ছি?,কেন যাচ্ছি?,তাকে নিয়ে বাইরে
বের হলাম কেন?লোকে আমাকে ছি ছি
করবে ইত্যাদি ইত্যাদি।আমি নীলাশার কথায়
কান না দিয়ে সোজা ওকে নিয়ে হসপিটালে
ঢুকলাম।ঢুকেই ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে
গেলাম।সব রেডিই ছিল।শুধু প্রয়োজন ছিল
নীলাশার।নীলাশা আমার দিকে শুধু
তাকিয়েই ছিল।হয়ত এই ভেবে তাকিয়ে ছিল
যে আমার উপর তার আস্থা আছে,ভালবাসা
আছে।তাই হয়ত কিছু আর জিজ্ঞাসা করেনি।
.
প্রায় ১ ঘন্টা ২০ মিনিট পরে নিলাশার
অপারেশন শেষ হয় কিন্তু আমাকে ভেতরে
ঢুকতে দেইনা।যখন নীলাশার জ্ঞান ফিরে
তখন আমাকে ডাক্তার এসে বলে ভেতরে
যেতে।আমি দরজার সামনে এসে দারিয়ে
পাগলিটার পাগলামি দেখছি।পাগলিটা তার
ডান হাত দিয়ে পায়ে হাত বুলাচ্ছে কিন্তু
সেটা আজকে কাটা নয়,নকল হলেও চলতে
পারবে সে পা নিয়ে।আমি নীলাশার পাশে
বসে তার দু পায়ে নুপুর পরিয়ে দিলাম আর
বললাম,
--কে বলেছে আমার বউয়ের পা নেই?এই যে
নুপুর দেওয়ার জন্যে হলেও আমার পাগলি
বউয়ের পা আছে।
.
নীলাশা কাদছে।অঝর ধারায় কাদছে।আমি
নিলাশাকে বুকে টেনে নিলাম।নিলাশা
কান্নার মাঝেও আমার পিঠে হাত দিয়ে কি
যেন লিখল।খুব সুন্দর সে হাতের লেখা।আমি
স্পর্শ পেয়েই বুঝে নেই এই মেয়ে "ভালবাসি"
লিখেছে।নীলাশা আমাকে বলল,
--এই ছেলে,তুমি কি জানো যে কাঁদলে
তোমাকে আমার পুঁচকে বরের মত লাগে।
.
আমি নিজে যে কখন কেদে ফেলেছি তা
বুঝিনি।তবে নীলাশার চোখের পানি আমার
বুকে এসে বিধে।আমি নীলাশার চোখের
পানি মুছিয়ে দিলাম আর বললাম,
--পারবেনা এই পুঁচকে বরকে এই ভাবেই
ভালবাসতে?
.
নীলাশা তার মাথা ঝাঁকিয়ে হু বলে দিল।
কিছু সময়ের জন্য হাসপাতালের এই রুমটি
ভালবাসায় ভরে গেল।এমন ভালবাসার সাক্ষি
হয়ে থাকল স্বয়ং উপরওয়ালা আর দুইটা
শরিরের একই সত্তা।যে সত্তা একে অপরকে
কাছে টানে,একে অপরকে ভালবাসে।আমি
জানি এই মেয়ে শুধু পা কেন?শরিরের যে
কোন একটা অঙ্গ নিয়ে হলেও আমাকে এই
ভাবেই ভালবাসবে,আমাকে কাছে রাখবে।
আমি মনে মনে পণ করলাম।নীলাশার চোখের
পানির বিনিময়ে হলেও আমি নীলাশার শেষ
দিন অব্দি তার পাশে থাকব,তাকে
ভালবাসবো আর তার ভালবাসার কাছে
প্রত্যহ হারবো।হেরে হেরে আমি তার কাছে
তার ভালবাসার সেই প্রিয় পুঁচকে বরটিই
থাকব।হারব আমি আর জিতবে তার
ভালবাসা।